ওভারিয়ান সিস্ট কী এ কারন,লক্ষন ও চিকিৎসা ।
লেকচারার,ডাঃ এম এইচ মোহন ............................................
বর্তমান সময়ে নারীদের বেশ আলোচিত এবং পরিচিত একটি রোগ হল ওভারিয়ান সিস্ট অথবা ডিম্বাশয়ের সিস্ট। যেকোন বয়সী নারীদের এই রোগ হতে পারে। তবে সাধারণত ৫০ বছর বয়সের মধ্যে এই রোগ দেখা দেয়। ওভারি বা ডিম্বাশয়ে পানিপূর্ণ থলেকে সিস্ট বলা হয়। নারীদের নানা ধরণের সিস্ট হতে পারে। যেমন ফাংশনাল সিস্ট, পলিসিস্টিক (পিসিওএস) সিস্ট, এন্ডমেট্রিওটিক সিস্ট, ডারময়েড সিস্ট এবং সিস্ট এডোনোমা।
যদিও বেশিরভাগ ওভারিয়ান সিস্ট নন-ক্যান্সারিয়াস (বিনাইন
বা কম ক্ষতিকর)
প্রকৃতির হয়। তবে
কিছু সিস্ট থাকে
যা ক্যান্সারিয়াস(ম্যালিগন্যান্ট) হয়।
সাধারণ কিছু লক্ষণের
মাধ্যমে এই রোগ
প্রকাশ পায়। শুরুতে
যদি এই রোগের
চিকিৎসা শুরু করা
যায়, তবে তা
সারিয়ে তোলা সম্ভব।
সিস্ট হওয়ার সাধারণ
লক্ষণগুলো আসুন তাহলে
জেনে নেওয়া যাক।
ফাংশনাল সিস্ট
সাধারণত বেশির ভাগ নারীর ক্ষেত্রে ফাংশনাল সিস্ট হয়ে থাকে।ওভারি থেকে ডিম না ফুটলে অথবা ডিম ফোটার পরও ফলিকলগুলো চুপসে না গেলে সিস্ট সৃষ্টি হতে পারে।
সমস্যা
এতে সাধারণত তেমন কোনো সমস্যা হয় না। অনেকেরই এটি হতে পারে।
পলিসিস্টিক (পিসিওএস) সিস্ট
ওভারিতে যে ছোট ফলিকল থাকে সেগুলো পূর্ণাঙ্গ না হলে পলিসিস্টিক সিস্ট হয়।
সমস্যা
এ ক্ষেত্রে রোগী যদি অবিবাহিত হন তাহলে সমস্যা হতে পারে। ছোট বয়সের মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হয়। বিবাহিতদের অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। বন্ধ্যত্বও হতে পারে।
এন্ডমেট্রিওটিক সিস্ট
ওভারিতে যে টিস্যুগুলো থাকে সেই টিস্যুগুলো যদি জরায়ু ছাড়া পেটের অন্য কোথাও হয়ে থাকে তখন তাকে এন্ডমেট্রিওটিক সিস্ট বলা হয়। এগুলো ডিম্বাশয়ে এমনিতেই থাকতে পারে এবং বেশি পরিমাণ থাকতে পারে।
সমস্যা
বন্ধ্যত্ব হতে পারে এবং মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।
ডারময়েড সিস্ট
এই সিস্টের ভেতর চামড়া, চুল, দাঁতও থাকতে পারে। এটিও সচরাচর থাকে। এর ফলে ক্যানসার হতে পারে।
সমস্যা
অনেক সময় তীব্র ব্যথা করে। যেকোনো সময় ওভারি পেঁচিয়ে যেতে পারে। এর কারণে বিনাইন ক্যানসার হতে পারে।
সিস্ট এডোনোমা : ডিম্বাশয়ে এক ধরনের তরল জাতীয় পদার্থই জমাট বেঁধে এই ধরনের সিস্ট হয়।
সমস্যা : এতে সমস্যা নাও হতে পারে।
কারণ
·
ওজনাধিক্যের কারণে সিস্ট হতে পারে।
·
বন্ধ্যত্ব রোগের চিকিৎসায় যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তার জন্যও এই সমস্যা হতে পারে।
·
হরমোনজনিত কারণে হতে পারে।
·
বংশগত কারণে হতে পারে।
·
ওভারি ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার, খাদ্যনালির ক্যানসার বিশেষ করে বিআরসিএ জিন যাদের থাকে তাদের এ সমস্যা হতে পারে।
লক্ষণ
ওভারি সিস্ট হলে খাওয়ার অরুচি হয়। ওজন বেড়ে যেতে পারে। যদি এর কারণে ক্যানসার হয় তখন ওজন কমে যেতে পারে। বমি হয়ে থাকে, পায়খানা কষা হয় এবং পেট তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়। কিছু সিস্টের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে।
১।
পেট
ফুলে
যাওয়া
এবং
ব্যথা
হওয়া
ওভারিনে সিস্ট দেখা
দিলে পেট বিশেষত
নিচের পেট ফুলে
যায়। ফুলে যাওয়ার
সাথে প্রচন্ড ব্যথা
থাকে। তলপেট কামড়ানো
এবং ব্যথা ওভারিন
সিস্টের কারণে হয়ে
থাকে।
২। প্রস্রাবের সমস্যা
সিস্ট হলে
অনেক সময় প্রস্রাবে সমস্যা হয়। প্রস্রাবে ব্যথা অথবা অতিরিক্ত প্রস্রাবের বেগ এমনকি
বার বার প্রস্রাবের বেগ ওভারিয়ান সিস্টের
কারণে হতে পারে।
৩। মাসিক বা ঋতুস্রাবের সমস্যা
অনিয়মিত ঋতুস্রাব ওভারিন সিস্টের অন্যতম
এবং প্রধান লক্ষণ।
এছাড়া মাসিকের সময়
মারাত্নক ব্যথা এড়িয়ে
যাওয়া উচিত নয়।
বিশেষত মাসিক শুরুর
আগে এবং পরের
ব্যথা হলে দ্রুত
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
উচিত।
৪। বমি বমি ভাব
ওভারিয়ান সিস্ট
বড় হলে সাধারণত
বমি বমি ভাব
তৈরি করে। সিস্টের
ইনফেকশন বৃদ্ধি পাওয়ার
সাথে সাথে বমি
বমি ভাব প্রকট
হয়।
৫। ওজন বৃদ্ধি
পেট ফুলে
যাওয়া এবং নিচের
পেটে ব্যথার সাথে
হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি
পাওয়া ওভারিয়ান সিস্টের
আরেকটি লক্ষণ। তবে
ক্যান্সার দেখা দিলে
ওজন কমতে থাকে।
৬। পেটের সমস্যা
ওভারিতে সিস্ট
দেখা দিলে পেটে
নানা সমস্যা দেখা
দিতে পারে। ডায়ারিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা
দেয়। সাধারণ এই
সমস্যা নিয়মিতভাবে দেখা
দিলে তা এড়িয়ে
যাওয়া একদম উচিত
নয়। পেট ফাঁপা,
বুক জ্বালাপোড়াও হয়ে
থাকে এইসময়।
৭। পিঠের ব্যথা
ওভারিতে সিস্ট
দেখা দিলে পিঠে
চাপ পড়ে এবং
তা থেকে ব্যথা
সৃষ্টি হয়। কেউ
কেউ এই কারণে
থাইয়ে ব্যথা অনুভব
করে। সিস্টের শুরুর
দিকে এই সমস্যাটা অনেকের দেখা দেয়।
সাধারণত আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে
এই রোগ নির্ণয়
করা হয়। তবে
সিটি স্ক্যান, এমআরআই,
লেপারোস্কোপি ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমেও এই রোগ
নির্ণয় করা সম্ভব।
চিকিৎসা
একজন
ভাল হোমিও চিকিৎসকের পরার্মশ নিন।
Comments
Post a Comment